Wednesday, August 14, 2013

বিশ্বায়ন, গণমাধ্যম, তথ্যপ্রযু্ক্তি এবং সাম্প্রতিক মিডিয়ার নানা প্রবণতা




 বিশ্বায়ন, গণমাধ্যম, তথ্যপ্রযু্ক্তি এবং সাম্প্রতিক মিডিয়ার নানা প্রবণতা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বিশ্বায়ন, গণমাধ্যম, তথ্যপ্রযুক্তি এবং সাম্প্রতিক মিডিয়ার নানা প্রবণতার উল্লেখযোগ্য দিক নিয়ে একটি সাক্ষাৎকার দেন। ২০১২ সালের ১৬ ডিসেম্বর অনলাইন মিডিয়া মিডিয়াটাইমসের পক্ষে সাক্ষাৎকারটি নেন ফারজানা আফরিন।

প্রশ্ন: বাংলাদেশের গণমাধ্যমের বিকাশের নেপথ্যে শিক্ষক হিসেবে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রয়েছে আপনার। এছাড়া নানাভাবে আপনি গণমাধ্যমের সঙ্গে সম্পৃক্ত। গণমাধ্যমেরও আপনি অত্যন্ত নিকটজন। বিশ্বায়ন- পরবর্তীকালে বাংলাদেশে অনলাইন সাংবাদিকতা বিস্তৃত হচ্ছে। এ পরিস্থিতিকে আপনি কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?

আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক: বিশ্বায়ন-পরবর্তীকাল বলতে সুনির্দিষ্টভাবে কোনটাকে বোঝাচ্ছি? বিশ্বায়নের প্রক্রিয়া তো চলছে। বিশ্বায়ন-পরবর্তীকালে না বলে বলা ভালো, বিশ্বায়নের এই সময়ে। কেননা তথ্য-প্রযুক্তি প্রতিদিনই বিস্তৃতি লাভ করছে। তথ্যপ্রযুক্তির যে উন্নয়ন তা পৃথিবীকে একেবারে এক জায়গায় নিয়ে এসেছে। আমরা লক্ষ করছি, যার জন্য এখন আমরা বলছি, যে এটা এখন একটা বিশ্বপল্লীতে রূপান্তরিত হয়েছে। বিশ্বপল্লী ক্রমশ এখন আরও ঘনীভূত হবে। এ প্রক্রিয়া চলতেই থাকবে এবং আমাদের গণমাধ্যমের যে সম্প্রসারণ, বিস্তৃতি, সেটাও চলতে থাকবে। 

এখন অনলাইন সাংবাদিকতার যে সুযোগগুলো আমরা পাচ্ছি, সেটাও ক্রমান্বয়ে আরো বিস্তৃতি লাভ করবে। ঘরে ঘরে আমরা যখন কম্পিউটারের প্রযুক্তি প্রবেশ করাতে পারবো,তখন অনলাইন সাংবাদিকতার গুরুত্ব আরো বেড়ে যাবে এটিই স্বাভাবিক। এখনও বাংলাদেশে অনলাইন ব্যবহারকারীর সংখ্যা, কম্পিউটার ব্যবহারকারীর সংখ্যা অনেক সীমিত। ১৬ কোটি মানুষের দেশে এ সংখ্যা যদি আমরা উপস্থাপন করি, দেখা যাবে, তা এখনও অনেক দূরে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। এমনকি মুদ্রণ মাধ্যম, ইলেক্ট্রনিক মাধ্যম এগুলোর সম্প্রসারণ প্রক্রিয়া মাত্র শুরু হয়েছে বাংলাদেশে।

পত্রিকার কথা যদি আমরা ধরি, মুদ্রণ মাধ্যমের সামগ্রিক পপুলেশনও বাংলাদেশে এখনও অনেক কম। পৃথিবীর যেগুলো উন্নত দেশ, সেখানে পত্রপত্রিকার সার্কুলেশন অনেক বেশি বলে আমরা জানি। সেগুলোর সঙ্গে তুলনা করলে আমরা দেখবো, এখনও আমাদের এখানে অনেক কম। জাপানে প্রতি হাজারে সাড়ে ছয়শ পত্রিকা সঞ্চালিত হয়। সেখানে আমাদের এখানে প্রতি হাজারে ১৫ থেকে ১৮টি পত্রিকা সঞ্চালিত হয়- যেখানে যুক্তরাষ্ট্রে বা যুক্তরাজ্যে হাজারে ৪৫০ থেকে ৪৭৫টি পত্রিকা সঞ্চালিত হয়। সে কারণেই আমাদের এখানে অনলাইন সাংবাদিকতার সম্ভাবনা অনেক বেশি। 

এখানে অনলাইন সাংবাদিকতার বিস্তৃতি বেশি ঘটবে এ কারণে যে, এ ক্ষেত্রে আর্থিক সংশ্লেষ অনেক কম। অতএব, এখানে অনলাইন পত্রিকা মানুষ পড়বে, অনলাইন টেলিভিশনও মানুষ দেখবে। আমি যেটা বলতে চাচ্ছি, কম্পিউটার ব্যবহারের প্রারম্ভিক বিনিয়োগটা একটু বেশি। অনলাইন পত্রিকা ও গণমাধ্যম ব্যবহারের জন্য প্রশিক্ষিত দর্শক-শ্রোতাও কম। তথ্যপ্রযুক্তির বিস্তৃতি ঘটবে, সেইসঙ্গে প্রশিক্ষণের মাত্রা বাড়ানোরও প্রয়োজন আছে। প্রশিক্ষিত দর্শক লাগবে আমাদের। আমি এ পরিস্থিতিকে মূল্যায়ন করি এভাবে যে, এটি যথেষ্ট সম্ভাবনাময় একটা জায়গা এবং বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ যারা এখন অনলাইন বা ইলেক্ট্রনিক মাধ্যমের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়, তারা অনলাইন মাধ্যমের সঙ্গে সম্পৃক্ত হবেন, ইলেক্ট্রনিক মাধ্যমের সঙ্গে সম্পৃক্ত হবে। দর্শকের সংখ্যা পাঠকের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বাড়বে। সম্ভাবনা প্রচুর।

প্রশ্ন: বাংলাদেশের অনলাইন জার্নালিজম বিকাশের পথে সুবিধার দিকগুলো কীরকম? আর প্রতিবন্ধকতাগুলো কেমন?

আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক: প্রথম প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে যে রকম করে বললাম, তার সঙ্গে যোগ করা যায় এভাবে যে, সুবিধার দিকগুলো হচ্ছে- বাংলাদেশ যথেষ্ট মেধাবী নতুন প্রজন্মের দেশ। আমরা দেখতে পাচ্ছি, বাংলাদেশের নতুন প্রজন্ম যারা স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরিয়ে আসছে, তারা নিজেরা কম্পিউটার ব্যবহারের ক্ষেত্রে অনেক বেশি দক্ষ। তাদের মাঝে যে উৎসাহ আগ্রহ আমরা লক্ষ করি, তাতে মনে হয় যে, অনলাইন সাংবাদিকতা বিকাশের পথ অনেক মসৃণ হবে। 

আমাদের প্রবীণ প্রজন্ম হয়ত কম্পিউটার জগতের সঙ্গে অতটা সম্পৃক্ত নয়। নতুন প্রজন্ম এমনকি স্কুলের ছেলেমেয়েরাও আজকাল দেখা যাচ্ছে যে, কম্পিউটার ব্যবহার করছে এবং কম্পিউটারের মাধ্যমে তারা একাডেমিকসহ বিভিন্ন ধরনের কাজ করছে। 

প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে, আমাদের তরুণ প্রজন্ম কম্পিউটারের বিষয়ে আগ্রহী, কৌতুহলী ও কম্পিউটার-দক্ষ হলেও তাদের আর্থিক অবস্থা অত জোরালো নয়। এ কারণেই তাদের অনেকের পক্ষেই ল্যাপটপ, ডেস্কটপ কম্পিউটার কেনা বা অনলাইনের সঙ্গে সংযুক্ত থাকা অনেকের পক্ষে সম্ভব হয় না। অনেকেই কম্পিউটার ব্যবহার করে কোনো না কোনো প্রতিষ্ঠানে গিয়ে। 

যারা অনলাইন সাংবাদিকতার সঙ্গে যুক্ত হবে, তাদের কম্পিউটার থাকা দরকার। এ ক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকে যদি সাশ্রয়ে কম্পিউটার সরবরাহের ব্যবস্থা নেওয়া হয়, যেটা আমরা দোয়েল-এর মাধ্যমে দেখতে পাচ্ছিলাম, একটা সম্ভাবনার দ্বার খুলেছিল; কিন্তু আবার দেখা গেল, ওটা বন্ধ হয়ে গেল। তো অল্প পয়সায় ল্যাপটপ, ডেস্কটপ ও কম্পিউটার সরবরাহের অর্থই হবে অনলাইন সাংবাদিকতার বিস্তার ঘটানো। এটা ভারতে আমরা দেখতে পাচ্ছি, কোরিয়াতে আমরা দেখতে পাচ্ছি, অত্যন্ত অল্পমূল্যে স্কুল ও কলেজের ছেলেমেয়েদের কম্পিউটারের সংযোগ দেওয়া হচ্ছে। আমাদের দেশে এ ধরনের একটা পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।

প্রশ্ন: বাঙালি সংস্কৃতির ক্ষেত্রে অনলাইন সাংবাদিকতার প্রভাব কী ধরনের? রাষ্ট্রীয় নীতি প্রণয়নে এর ভূমিকা কতখানি কার্যকরি হয়ে উঠেছে? 

আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক: বাঙালি সংস্কৃতির ক্ষেত্রে অন্যান্য মাধ্যম যে রকম প্রভাব ফেলে, অনলাইনও একই ধরনের প্রভাব ফেলবে। সংস্কৃতির সঙ্গে গণমাধ্যমের যে সম্পর্ক, সেটাই গুরুত্বপূর্ণ। গণমাধ্যমের বৈশিষ্ট্য বা প্রকৃতি থেকে গণমাধ্যমের নিজস্ব যে ব্যাকরণ, সেটির ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। যেমন- গণমাধ্যমের কাজ কী- পাঠককুলকে তথ্য দেওয়া। তাদের বিনোদন দেওয়া এবং তাদের শিক্ষার মাত্রাকে ক্রমান্বয়ে বাড়িয়ে তোলা। 

তো অনলাইন সাংবাদিকতা, সম্প্রচার সাংবাদিকতা ও মুদ্রণ সাংবাদিকতা তাদের বড় একটি কাজ সংস্কৃতি ক্ষেত্রে। গণমাধ্যমের কাজ একটি দেশের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মে স্থানান্তর করা। অতএব, এটা অন্য গণমাধ্যম যেভাবে করবে, অনলাইন গণমাধ্যমও সেভাবে করবে। সংস্কৃতি ও সাংবাদিকতার যে সম্পর্ক, সে সম্পর্ক অনলাইন সাংবাদিকতার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।

আর রাষ্ট্রীয় নীতি প্রসঙ্গে, গণমাধ্যমের জন্য রাষ্ট্র যে নীতি নেবে, তা সব গণমাধ্যমের বেলায় একই হতে হবে। রাষ্ট্রীয় নীতি হতে হবে এমন যে, গণমাধ্যমে হস্তক্ষেপ করা যাবে না। সাংবাদিকরা তাদের নিজস্ব বস্তুনিষ্ঠতার নীতিমালা মেনে প্রতিবেদন লিখবেন, জমা দেবেন, প্রচার করবেন। সেখানে একটা বিস্তারিত নির্দেশনা থাকতে পারে। কিন্তু, একেবারে সুনির্দিষ্টভাবে এটা করা যাবে না, এটা করা যাবে- এই জিনিসটা সরকার করবে না। এটা করবে অনলাইন গণমাধ্যমের সঙ্গে যুক্ত সংগঠনগুলো। 

অনলাইন গণমাধ্যমগুলো নিজেরা বসে নীতিমালা ঠিক করবে। সারা দুনিয়াতেই এডিটররা বসে ঠিক করে তাদের পত্রিকা কী নিয়মে চলবে। সাংবাদিকতার স্বাধীনতা তো সেই জায়গাই যে, সরকার কোনোভাবে হস্তক্ষেপ করবে না। কিন্তু, কোনো ধরনের বিভ্রান্তি ছড়ানো বা কোনো মিথ্যা সংবাদ পরিবেশন করা, সেই জায়গায় যদি সরকার এসে প্রমাণ করতে পারে যে, এটি সঠিক নয়, সেক্ষেত্রে সরকার তার নিজস্ব নীতিতে চলবে। সরকারের সে বিষয়ে আইন আছে। 

এটা পত্রিকার দায়িত্ব যে, আমি পত্রিকা পরিচালনা করছি; আমাদের বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করতে হবে। কেউ বস্তুনিষ্ঠতার বাইরে গেল, কেউ একটা এমন সংবাদ পরিবেশন করলো, যেটা কারো মানসম্মান হানি করলো বা সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছে; সেক্ষেত্রে সরকার মামলা করতে পারে। আজকের দিনে ‘অনলাইন’, ‘অফলাইন’ আলাদা কিছু নয়; সবার জন্যই একই নীতিমালা হতে হবে। 

প্রশ্ন: অনেকগুলো উগ্র মতাদর্শ এখন অনলাইন মাধ্যমকে কেন্দ্র করে সংগঠিত হতে দেখা যাচ্ছে। সে ক্ষেত্রে বিষয়টি কেমন হবে?

আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক: অনলাইন সাংবাদিকতার নিয়ম মেনে চললে এটা হওয়ার কথা নয়। সাংবাদিকতার তো কিছু নিয়ম আছে। সেই নিয়মের বাইরে গেলে তা সাংবাদিকতা হবে না। ফেসবুকে কে কী লিখলো, সেটা তো গণমাধ্যম নয়। আর যদি বলা হয়, ইন্টারনেট মাধ্যম; তা হলে তো অন্য কথা। সাংবাদিকতার বাইরে কিছু করতে চাইলে সেটা গোপনে চিঠি লিখে বা লিফলেট ছেপেও করতে পারে।

প্রশ্ন: অনলাইন জার্নালিজম ও নিউমিডিয়ার তো অনেকগুলো ইতিবাচক দিক রয়েছে। এর কোনো ঝুঁকির দিক  কি লক্ষ করেন?

আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক: সাংবাদিকতায় ঝুঁকির দিক একটিই- এখানে যদি কোনো ধরনের অসত্য, ভুল ও মিথ্যা তথ্য প্রচার হয়, সেটিই ঝুঁকির দিক; যে কোনো গণমাধ্যমের জন্যই। একটা হচ্ছে- ‘ইনফরমেশন’, অন্যটি হচ্ছে- ‘ডিসইনফরমেশন’, আরেকটি হচ্ছে ‘মিসইনফরমেশন’। কখনও কখনও ভুল হয়ে যায়, সেটি পরবর্তীতে সংশোধন করা যায়, এটা মিসইনফরমেশন। আর অনেক সময় উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মিথ্যা তথ্য পরিবেশন করা হয়, সেটি হচ্ছে ডিসইনফরমেশন। যেমন: সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করা দরকার, এজন্য গার্মেন্টস কর্মী মারা গেছে ২০ জন, এখন এটাকে ৫০ জন বলে চালিয়ে দেওয়া হলো অর্থাৎ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তথ্যকে বিকৃত করা হলো। এই মিসইনফরমেশন-ডিসইনফর্মেশনের সুযোগ নেই। বস্তুনিষ্ঠতার বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। এটির বাইরে যাওয়ার মানেই ঝুঁকির মধ্যে পড়া। 

আরেকটি ঝুঁকি হচ্ছে, সাংবাদিকদের। যারা সাংবাদিকতায় নিয়োজিত আছেন, তারা এ সত্য প্রকাশ করতে গিয়ে নানা ধরনের ঝুঁকি নিচ্ছেন। জীবনের ঝুঁকি নিচ্ছেন।বহু সাংবাদিক ইতোপূর্বে জীবন দিয়ে গেছেন, শুধু বাংলাদেশে নয়, সারা বিশ্বেই। এ ঝুঁকিটা আছে বলেই সাংবাদিকতাকে বলা হয় ঝুঁকিপূর্ণ পেশা। সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ পেশা বলতে সাংবাদিকতাকেই বোঝানো হয়। আমরা দেখেছি, তথ্য প্রকাশ করতে গিয়ে আমাদের দেশে অনেক সাংবাদিক নিহত হয়েছেন।

প্রশ্ন:আপনার কি মনে হয় না আমাদের অনলাইন সাংবাদিকতার ক্ষেত্র যথেষ্ট বৈচিত্র্যহীন? এ বিষয়ে আপনার কোনো পরামর্শ আছে?

আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক: আমার মনে হয় না, অনলাইন সাংবাদিকতা একেবারে বৈচিত্র্যহীন। তবে অনলাইন সাংবাদিকতাকে আরো উন্নতি, সমৃদ্ধির দিকে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। অনলাইন সাংবাদিকতার ধারণাটা আমাদের দেশে নতুন। অনলাইন সাংবাদিকতাকে আকর্ষণীয় করতে আমাদের নতুন প্রজন্মকে আরো সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে। মুদ্রণ মাধ্যম, সম্প্রচার মাধ্যমকে যুক্ত করে সুযোগ-সুবিধা বাড়ালে নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা অনলাইন সাংবাদিকতার দিকে আকৃষ্ট হবে।

প্রশ্ন: আপনি নিশ্চয় জানেন, সরকার চলচ্চিত্র অধ্যয়নের জন্য একটি ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করতে যাচ্ছে। এদিকে এ বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও টেলিভিশন ও ফিল্ম স্টাডিজ বিভাগ খোলা হয়েছে। এ দুটি প্রতিষ্ঠানের আন্তঃসম্পর্ক কেমন হবে? প্রস্তাবিত ইনস্টিটিউটটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টেলিভিশন ও ফিল্ম স্টাডিজ বিভাগের ওপর কী ধরনের প্রভাব ফেলবে?

আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক: আমরা এখনও সুষ্পষ্টভাবে জানি না যে, সরকার যে ইনস্টিটিউট খুলতে যাচ্ছে, কী কাঠামোতে তারা করবেন। তবে আমাদের সঙ্গে কথা হলে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করার প্রস্তাব দেবো। 
প্রশ্ন: নিউমিডিয়ার বিস্তার ও এর অপব্যবহার রোধ করার বিষয়ে কিছু বলুন।

আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক: নিউমিডিয়ার অপব্যবহার রোধে নীতিমালা লাগবে। কোনো স্বাধীনতা মানেই নিরঙ্কুশ স্বাধীনতা নয়। স্বাধীনতা মানেই কারো নামে যা-তা লেখা, মিথ্যা লেখা, কারো আজেবাজে ছবি ওখানে আপলোড করে দেওয়া, অপমান করার ব্যবস্থা করা নয়। এখন নতুন মাধ্যম, নতুন প্রযুক্তি অনেক সুযোগ-সুবিধা দিয়েছে। এসব মাধ্যম আমাদের অনেক শক্তি দিয়েছে। সেই শক্তিকে সঠিকভাবে প্রয়োগ করার দায়িত্বও কিন্তু আমার।
স্বাধীনতাকে যেন যথেচ্ছাচার হিসেবে ব্যবহার না করি, স্বাধীনতাকে নিরঙ্কুশ স্বাধীনতা মনে করে যা খুশি তা করা নয়। যারা অপব্যবহার করবে, তাদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। স্বাধীনভাবে প্রকাশিত মতামত আমার বিরুদ্ধেও যেতে পারে, বলুক তাতে কোনো সমস্যা নেই। সম্প্রতি, ফেসবুকে ছবি আপলোড করা নিয়ে বড় বড় কিছু ঘটনা ঘটে গেছে, এ ধরনের ঘটনা যারা ঘটাবে, তাদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে।

তথ্য-প্রযুক্তির সুবিধায় লাখ লাখ মানুষ উপকৃত হচ্ছে। দুই/একজন এর অপব্যবহার করে। এর জন্য এটি বন্ধ করে দিতে পারে না। নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। তবে এটি অপব্যবহার করা যাবে না। অপরাধীকে শনাক্ত করে বিচারের আওতায় আনতে হবে। 

প্রশ্ন: তথ্য-প্রযুক্তির অপব্যবহার থেকে ব্যক্তিমানুষকে সুরক্ষায় কী ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক ও আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি?

আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক: প্রথমত- শিক্ষা দরকার। শাস্তির আগে চিন্তা করতে হবে, তাকে প্রকৃত শিক্ষা দেওয়া হয়েছে কিনা। স্কুলেই এখন কম্পিউটার শিক্ষা দেওয়া হয়ে থাকে। সেখান থেকে ন্যায়-অন্যায় বিষয়ে শিক্ষিত করে তুলতে হবে। সাংস্কৃতিক মান বাড়াতে হবে।

(সাক্ষাৎকারটি মিডিয়াটাইমস থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে)। 

No comments: