সাংবাদিকতার এক অসাধারণ মুহূর্তে
by Mashiul.Alam
on Sun, 26/12/2010 - 6:05pm (Blog.priyo.com)
বিশ্বজুড়ে সাংবাদিকতায় এ মুহূর্তে এক
বিশেষ পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটেছে। তা সংক্ষেপে এ রকম: বিগ মিডিয়া বা বড় সংবাদমাধ্যমকে
মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করছে উইকিলিকস নামের একটি ছোট্ট সংগঠন, যার কোনো অফিস নেই,
প্রেস নেই, টাকাপয়সা নেই—যার
নিয়মিত কর্মীসংখ্যা মাত্র পাঁচ।
বিলেতের গার্ডিয়ান, আমেরিকার নিউইয়র্ক
টাইমস, ফ্রান্সের ল্য মঁদ, জার্মানির ডের স্পিগেল এবং স্পেনের এল পাইস—প্রধানত
এই পাঁচটি মূলধারার বড় সংবাদপত্র উইকিলিকসের সাম্প্রতিক সরবরাহ করা মার্কিন গোপন
কূটনৈতিক তারবার্তাগুলোর ভিত্তিতে নানা ধরনের অজানা খবরাখবর প্রকাশ করে চলেছে,
যেগুলো তারা নিজেরা অনুসন্ধান করে পাওয়ার ও প্রকাশ করার চেষ্টা করে না।
সেসব খবর আবার বিশ্বের ছোট-বড় অন্য
সংবাদমাধ্যমগুলোও প্রকাশ করছে। বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমও এর বাইরে থাকছে না।
উইকিলিকস নামের একটি ছোট্ট ভার্চুয়াল সংগঠনটি এ মুহূর্তে সারা বিশ্বের বড়, মাঝারি,
ছোট—সব
ধরনের সংবাদমাধ্যমের আচরণ নিয়ন্ত্রণ করছে। সাংবাদিকতার ইতিহাসে এটা আক্ষরিক অর্থে
এক অভূতপূর্ব পরিস্থিতি।
এত কাল ছোট সংবাদ আউটলেটগুলো বড়দের
দ্বারা প্রভাবিত হয়ে আসছে। সংবাদভুবন বড় বড় সংবাদ সংস্থা, টিভি ও সংবাদপত্রগুলোর
নিয়ন্ত্রণে। তারা জনগণকে কী জানাবে, আর কী জানতে দেবে না; জনগণের জন্য কী জানা
গুরুত্বপূর্ণ, আর কী গুরুত্বপূর্ণ নয়—এসব
নির্ধারণ করে তারা নিজেরাই; নিজেদের বিচারবুদ্ধি, স্বার্থবুদ্ধি এবং ক্ষেত্রবিশেষে
খেয়ালখুশি অনুযায়ী। আয় বাড়ানোর লক্ষ্যে তারা বিভিন্ন সময়ে নানা রকমের মার্কেটিং
রিসার্চ বা জরিপকর্ম চালায়, তাতে সাধারণত তারা বোঝার চেষ্টা করে, আমপাঠক কী বেশি ‘খেতে
চায়’।
কিন্তু জাতীয়-আন্তর্জাতিক
গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলোর ক্ষেত্রে তারা জনমতের প্রতিফলন ঘটানোর চেয়ে জনমতকে
প্রভাবিত করার কাজেই বেশি ব্যস্ত থাকে। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাবলয়, শাসকগোষ্ঠী,
বণিক-সম্প্রদায় ও বিভিন্ন কায়েমি স্বার্থবাদী গোষ্ঠী মিলে যে ক্ষমতাজাল গড়ে ওঠে,
বড় সংবাদমাধ্যম ওই জালের ভেতরের একটা অংশ। এই ব্যবস্থায় প্রেস ফ্রিডম বা
সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার মানে মালিক-প্রকাশকের স্বাধীনতা, বেতনভুক সাংবাদিকের
স্বাধীনতা নয়। আর করপোরেট মালিকের স্বাধীনতা বাঁধা পড়ে থাকে ওই বৃহত্তর
ক্ষমতাজালের নানা গিঁটের সঙ্গে। ফলে, বড় সংবাদমাধ্যম কী প্রকাশ করবে, আর কী গোপন
রাখবে, তা নির্ধারিত হয় তার মালিকের সঙ্গে ক্ষমতাসম্পর্কের হিসাব-নিকাশের ওপর।
উইকিলিকসের মার্কিন গোপন নথিপত্র
প্রকাশের ফলে এই ব্যবস্থায় বিপ্লব ঘটে গেছে—এমন কথা বলব
না। তবে একটা পরিবর্তন সূচিত হয়েছে এবং ভবিষ্যতের সংবাদমাধ্যম এবং তার আচরণ কেমন
হতে পারে, সে আভাসগুলো আগের চেয়ে আরও স্পষ্ট হয়েছে। বড় মিডিয়ার ‘গেট
কিপিং’
বা তথ্যের পাহারাদারির ধরন এবার বদলে যাবে। প্রথাগত সাংবাদিকতার যেসব গোঁড়া সমর্থক
ইন্টারনেটভিত্তিক তথ্য আদান-প্রদানের ব্যবস্থাকে সাংবাদিকতা বলে স্বীকৃতি দিতে চান
না, তাঁদের এবার নতুন করে ভাবতে হবে।
ইন্টারনেট প্রযুক্তির আবির্ভাবের পর পার্টিসিপেটরি জার্নালিজম, সিটিজেনস জার্নালিজম ইত্যাদি নানা নামে যে এক নতুন ধরনের সাংবাদিকতার ধারণার উদ্ভব ঘটেছে, তা নিয়ে এ রকম একটা বিতর্ক আছে: ইন্টারনেটভিত্তিক তথ্য আদান-প্রদান ব্যবস্থাটি আদৌ সাংবাদিকতা কিনা। মূলধারার সাংবাদিকতার সমর্থকেরা মনে করেন, অনলাইন সাংবাদিকতাকে সাংবাদিকতা বলা যায় না; একটু বাড়িয়ে কেউ কেউ বলেন, ‘ইন্টারনেট ইজ কিলিং জার্নালিজম।’ কারণ ইন্টারনেটে সংবাদমূল্যবাহী তথ্য নেই, এই জগতে যাঁরা চলাফেরা করেন, তাঁরা অদক্ষ, অ্যামেচারিস্ট; তাঁদের সাংবাদিকতার প্রশিক্ষণ নেই, এটা তাঁদের পেশা নয়, তাই সাংবাদিকতার এথিকস বা নৈতিকতার ধার তাঁরা ধারেন না। তাঁরা ‘গসিপ’ বা গালগল্প ছড়ান, তাঁরা কোনো তথ্যের সত্যাসত্য যাচাই না করেই অনলাইনে ছেড়ে দেন, তার ফলাফল কী হতে পারে, তা ভাবেন না, কোনো দায়দায়িত্ব নেন না।
ইন্টারনেট প্রযুক্তির আবির্ভাবের পর পার্টিসিপেটরি জার্নালিজম, সিটিজেনস জার্নালিজম ইত্যাদি নানা নামে যে এক নতুন ধরনের সাংবাদিকতার ধারণার উদ্ভব ঘটেছে, তা নিয়ে এ রকম একটা বিতর্ক আছে: ইন্টারনেটভিত্তিক তথ্য আদান-প্রদান ব্যবস্থাটি আদৌ সাংবাদিকতা কিনা। মূলধারার সাংবাদিকতার সমর্থকেরা মনে করেন, অনলাইন সাংবাদিকতাকে সাংবাদিকতা বলা যায় না; একটু বাড়িয়ে কেউ কেউ বলেন, ‘ইন্টারনেট ইজ কিলিং জার্নালিজম।’ কারণ ইন্টারনেটে সংবাদমূল্যবাহী তথ্য নেই, এই জগতে যাঁরা চলাফেরা করেন, তাঁরা অদক্ষ, অ্যামেচারিস্ট; তাঁদের সাংবাদিকতার প্রশিক্ষণ নেই, এটা তাঁদের পেশা নয়, তাই সাংবাদিকতার এথিকস বা নৈতিকতার ধার তাঁরা ধারেন না। তাঁরা ‘গসিপ’ বা গালগল্প ছড়ান, তাঁরা কোনো তথ্যের সত্যাসত্য যাচাই না করেই অনলাইনে ছেড়ে দেন, তার ফলাফল কী হতে পারে, তা ভাবেন না, কোনো দায়দায়িত্ব নেন না।
অন্যদিকে, নাগরিক সাংবাদিকতার
সমর্থকেরা বলেন, প্রথাগত সাংবাদিকতা ক্ষমতাকাঠামোর সেবক; নাগরিকদের স্বার্থ তাঁদের
কাছে গৌণ বিষয়। তথ্য প্রকাশের মাধ্যমের মালিকানার ওপর তাঁদের একচেটিয়া আধিপত্যের
দিন শেষ। এখন নাগরিকেরাও নিজেরা সংবাদ সংগ্রহ ও প্রকাশ করার মাধ্যম পেয়ে গেছেন।
এখন সাংবাদিকতা হবে ‘ইন্টারঅ্যাকটিভ’;
একমুখী তথ্যপ্রবাহের দিন শেষ।
উইকিলিকসের কাজের প্রতি সমর্থন জানাতে
গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের দি আটলান্টিক সাময়িকীতে ডেভিড স্যামুয়েলস লিখেছেন: এটা একটা
বাস্তব সত্য যে আমেরিকার বর্তমান সংবাদমাধ্যমে আইনগত পদক্ষেপের হুমকির কারণে
রিপোর্টার ও সম্পাদকেরা জনস্বার্থের জন্য কল্যাণকর হতো—এমন
তথ্য সংগ্রহ ও প্রকাশ করা থেকে নিয়মিতভাবে সরে আসতে বাধ্য হচ্ছেন। এ সত্য যাঁরা
অস্বীকার করেন, তাঁরা হয় অজ্ঞ, নয় মিথ্যাবাদী।
আমেরিকায় প্রত্যেক সৎ রিপোর্টার ও
সম্পাদক জানেন যে অধিকাংশ সংবাদমাধ্যম প্রতিষ্ঠান ভেঙে পড়েছে;
সরকারি-বেসরকারিনির্বিশেষে বিত্তশালী মহলগুলোর ক্রমাগত আইনি পদক্ষেপের হুমকির ফলে
সৎ সাংবাদিকদের পক্ষে কাজ করা অত্যন্ত কঠিন হয়ে উঠেছে। ফলে যে নাজুক তথ্যব্যবস্থা
আমাদের গণতন্ত্রকে ধরে রেখেছে, সেখানে বিরাট বিরাট গর্ত আর ফাঁস তৈরি হয়েছে।
দ্য হাফিংটন পোস্ট পত্রিকায় জেমস মুর
লিখেছেন: আমেরিকার মূলধারার সংবাদমাধ্যম কিম কার্দাশিয়ানের সর্বসাম্প্রতিক প্রেমিক
আর মার্ক জাকারবার্গের ব্যক্তিগত উড়োজাহাজের আকৃতির গল্প পাঠককে গেলাতে যত আগ্রহী,
আফগানিস্তানে, ইরাকে বা গুয়ান্তানামো বে কারাগারে মার্কিন সৈন্যদের মানবতাবিরোধী
আচরণের খবর দিতে ততটা মোটেই নয়। মূলধারার সাংবাদিকতা যদি পর্যাপ্ত মাত্রায় কাজ
করত, তাহলে আজ আমরা যা উইকিলিকসের মাধ্যমে জানতে পারছি, তা আগেই জানতে পারতাম।
একই পত্রিকায় জনাথন উইলার লিখেছেন:
উইকিলিকসের কাজের পদ্ধতির ভুলত্রুটি যা-ই থাকুক না কেন, আমাদের তথ্য-পরিবেশে এক
বিপজ্জনক শূন্যতা পূরণ করছে এই ওয়েবসাইট। সংবাদমাধ্যমের দায়িত্ব সরকারের ক্ষমতার
অপব্যবহার এবং গোপন কর্মকাণ্ডগুলোকে চ্যালেঞ্জ করা, রক্ষা করা নয়। মূলধারার
সংবাদমাধ্যম চ্যালেঞ্জ করার সে দায়িত্ব পালন করছে না। দায়িত্বটি পালন করছে
উইকিলিকস। অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ একটা ক্যু করে ফেলেছেন। উইকিলিকসের
মাধ্যমে তিনি শত শত, হাজার হাজার জানালা খুলে দিয়েছেন।
ভিন্নমতও আছে। যেমন-উইকিলিকসের কাজের
ও দৃষ্টিভঙ্গির গভীর সমালোচনা পাওয়া গেল দ্য হাফিংটন পোস্ট পত্রিকার সাবেক
অ্যাসোসিয়েট নিউজ এডিটর ল্যারি ওম্যাকের লেখায়। তিনি লিখেছেন, ব্লগার ও
রিপোর্টারদের মধ্যকার নৈতিকতার ফারাকটা আরও বড় করে তুলে ধরেছে উইকিলিকস। তাঁর
প্রধান যুক্তি, নথিপত্র ফাঁসের ক্ষেত্রে উইকিলিকস এর সম্ভাব্য ক্ষতিকর ফলগুলো
চিন্তা করে দেখেনি।
তিনি বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন,
আফগানিস্তানে যুদ্ধরত মার্কিন সৈন্যদের যেসব বেসামরিক আফগান নাগরিক সহযোগিতা করেছেন,
তাঁদের নাম-পরিচয় প্রকাশের বিষয়টি। তিনি জানিয়েছেন, ইতিমধ্যে অনেক আফগান নাগরিক
ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর তাঁদের নিরাপত্তা দেওয়ার আশ্বাস
দিয়েছে, কিন্তু তালেবানের ভয়ে ইতিমধ্যে অনেকেই ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। ওম্যাক
অ্যাসাঞ্জ সম্পর্কে মন্তব্য করেছেন, সাংবাদিক হিসেবে, ব্লগার হিসেবে বা স্রেফ
মানুষ হিসেবে তাঁর কোনো নৈতিক মানদণ্ড নেই।
কেনিয়ায় দুর্নীতি, গুয়ান্তানামো বে
কারাগারে মানবাধিকার লঙ্ঘন, আইভরি কোস্টে বিষাক্ত বর্জ্য নিক্ষেপ, ব্যাংকিং খাতে
দুর্নীতি ইত্যাদি বিষয়ে তথ্য প্রকাশের জন্য উইকিলিকস প্রশংসা পেতে পারে—এই মন্তব্য
করে ল্যারি ওম্যাক লিখেছেন, ‘কিন্তু অ্যাসাঞ্জের ওয়েবসাইট পৃথিবীজুড়ে অনেক মানুষের
অধিকার ও নিরাপত্তার প্রতি দায়িত্বহীন অশ্রদ্ধা দেখিয়ে চলেছে বারবার।’ তিনি
দায়িত্বশীল সাংবাদিকদের নৈতিকতা থেকে অ্যাসাঞ্জের অবস্থানকে অনেক দূরবর্তী বলে
মন্তব্য করেছেন।
ওম্যাক মনে করেন, কোনো দায়িত্বশীল
সংবাদমাধ্যম ওই বেসামরিক আফগান নাগরিকদের নাম-পরিচয় প্রকাশ করত না। তিনি লিখেছেন,
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসাঞ্জের কাছে বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ তুললে অ্যাসাঞ্জ
‘আমি সাংবাদিক নই’ বলে দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে চেয়েছেন। তিনি অ্যামনেস্টির কাছে লোক
চেয়েছেন, যারা নথিগুলো থেকে আফগান বেসামরিক লোকদের নামগুলো বাদ দেওয়ার কাজটি করে
দেবে, যেহেতু অ্যাসাঞ্জের লোকবল কম। অ্যামনেস্টি তখন অ্যাসাঞ্জের সঙ্গে বৈঠকের
প্রস্তাব পাঠালে ‘আমি খুব ব্যস্ত, আমার সময় নেই’ বলে অ্যাসাঞ্জ এড়িয়ে গেছেন।
ওম্যাক লিখেছেন, উইকিলিকসের নথিগুলোর
ভিত্তিতে দায়িত্বশীলতার সঙ্গে সংবাদ পরিবেশন করেছে গার্ডিয়ান, নিউইয়র্ক টাইমস ও
ডের স্পিগেল—এই তিনটি পত্রিকা একসঙ্গে বসে সবচেয়ে স্পর্শকাতর বিষয়গুলো নিয়ে
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের সঙ্গে পরামর্শ করেছে এবং মার্কিন কর্মকর্তারা যেন
ব্যক্তিগতভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হন, সেসব বিচার-বিশ্লেষণ করার পর প্রতিবেদন তৈরি করে
ছেপেছে। পররাষ্ট্র দপ্তরকে জড়ানোর পরও তারা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ভীষণ বিব্রতকর
অনেক তথ্য প্রকাশ করতে পেরেছে, মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর সেগুলো আটকাতে পারেনি।
ওম্যাক লিখেছেন, একটি গোপন নথির সব লাইন, সব পৃষ্ঠা হুবহু ছাপতেই হবে, এমন নয়।
এখানেই দরকার সাংবাদিকি দক্ষতা, পরিশ্রম এবং কিছু সাধারণ কাণ্ডজ্ঞান।
যুক্তরাষ্ট্রের কার্লটন স্কুল অব
জার্নালিজম অ্যান্ড কমিউনিকেশনসের ডিরেক্টর ক্রিস ওয়াডেলও মনে করেন, উইকিলিকস
নির্বিচারে সব নথিপত্র প্রকাশ করে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেয়নি। ইতালির
প্রধানমন্ত্রী সিলভিয়ো বেরলুসকোনি পার্টিগুলোতে কী রং-তামাশা করেন বা লিবিয়ার
গাদ্দাফির ব্যক্তিগত জীবনযাপনের বর্ণনা কোনো দায়িত্বশীল সাংবাদিকতা নয়; ওই সব তথ্য
জনগণের কোনো কাজেই আসবে না। ওয়াডেল মনে করেন, জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়ে প্রকৃতই বৈধ
সতর্কতার ব্যাপার আছে, সাংবাদিকদের উচিত সে ব্যাপারে সচেতন ও সতর্ক থাকা।
গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় তথ্য হয়তো বা অক্সিজেনের মতো গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু অতিরিক্ত
অক্সিজেনপূর্ণ পরিবেশে একটি স্ফুলিঙ্গ থেকেই দাবানলের মতো সর্বনাশা ঘটনা ঘটে যেতে
পারে বলে তিনি মন্তব্য করেছেন।
জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের নিজের লেখা এবং কিছু বিক্ষিপ্ত বক্তব্য থেকে বুঝতে কষ্ট হয় না যে তাঁর মেজাজ উচ্চাকাঙ্ক্ষী বিপ্লবীর। তাঁর কাজের ধরন নৈরাজ্যবাদীর। তিনি উইকিলিকসের প্রধান সম্পাদক। উইকিলিকসের স্লোগান: ‘উই হেল্প কিপ গভর্নমেন্টস ওপেন।’ কিন্তু সাংবাদিকতায় তাঁর দীক্ষা নেই, অভিজ্ঞতাও নেই। তবে চিন্তা আছে, স্বপ্ন আছে। বিশ্বের মূলধারার সংবাদমাধ্যমের স্বভাব-চরিত্র সম্পর্কেও তাঁর ধারণা পরিষ্কার। তিনি লিখেছেন, ‘উইকিলিকস প্রবর্তন করেছে এক নতুন ধরনের সাংবাদিকতা, বৈজ্ঞানিক সাংবাদিকতা। জনগণের সামনে সংবাদ পরিবেশনের লক্ষ্যে আমরা অন্যান্য সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে মিলে কাজ করি; আমরা যে সংবাদ পরিবেশন করি, তা যে সত্য, সেটা প্রমাণ করারও উপায় রাখি। বৈজ্ঞানিক সাংবাদিকতার সুবিধা হলো, আপনি সংবাদ পড়তে পারবেন, তারপর অনলাইনে আরেক জায়গায় ক্লিক করে দেখতে পাবেন মূল নথিপত্র বা দলিল, যার ভিত্তিতে ওই সংবাদ রচনা করা হয়েছে। এভাবে আপনি নিজেই বিচার করে দেখতে পাবেন সংবাদটি সত্য কি না, সাংবাদিক ওই সংবাদটি সঠিকভাবে পরিবেশন করেছেন কি না।’
জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের নিজের লেখা এবং কিছু বিক্ষিপ্ত বক্তব্য থেকে বুঝতে কষ্ট হয় না যে তাঁর মেজাজ উচ্চাকাঙ্ক্ষী বিপ্লবীর। তাঁর কাজের ধরন নৈরাজ্যবাদীর। তিনি উইকিলিকসের প্রধান সম্পাদক। উইকিলিকসের স্লোগান: ‘উই হেল্প কিপ গভর্নমেন্টস ওপেন।’ কিন্তু সাংবাদিকতায় তাঁর দীক্ষা নেই, অভিজ্ঞতাও নেই। তবে চিন্তা আছে, স্বপ্ন আছে। বিশ্বের মূলধারার সংবাদমাধ্যমের স্বভাব-চরিত্র সম্পর্কেও তাঁর ধারণা পরিষ্কার। তিনি লিখেছেন, ‘উইকিলিকস প্রবর্তন করেছে এক নতুন ধরনের সাংবাদিকতা, বৈজ্ঞানিক সাংবাদিকতা। জনগণের সামনে সংবাদ পরিবেশনের লক্ষ্যে আমরা অন্যান্য সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে মিলে কাজ করি; আমরা যে সংবাদ পরিবেশন করি, তা যে সত্য, সেটা প্রমাণ করারও উপায় রাখি। বৈজ্ঞানিক সাংবাদিকতার সুবিধা হলো, আপনি সংবাদ পড়তে পারবেন, তারপর অনলাইনে আরেক জায়গায় ক্লিক করে দেখতে পাবেন মূল নথিপত্র বা দলিল, যার ভিত্তিতে ওই সংবাদ রচনা করা হয়েছে। এভাবে আপনি নিজেই বিচার করে দেখতে পাবেন সংবাদটি সত্য কি না, সাংবাদিক ওই সংবাদটি সঠিকভাবে পরিবেশন করেছেন কি না।’
সন্দেহ নেই, ডিজিটাল যুগের আদর্শ
সাংবাদিকতার রূপকল্প এটি। কিন্তু অ্যাসাঞ্জ বা উইকিলিকস কাজের ক্ষেত্রে এখনো এই
সাংবাদিকতার নিদর্শন দেখায়নি। তারা তথ্য মহাসড়কে গোপন নথিপত্র পাইকারি হারে ঢেলে
দিচ্ছে শুধু। এটা সাংবাদিকতার একটা অংশ; খুব গুরুত্বপূর্ণ অংশ, কিন্তু সম্পূর্ণ
সাংবাদিকতা নয়।
নতুন ধরনের এক সাংবাদিকতার উন্মেষ
ঘটতে যাচ্ছে। নতুন কিছুর উন্মেষকালে কিছু নৈরাজ্য ঘটে। এ নৈরাজ্যের চাপে প্রথাগত
সাংবাদিকতার ‘গেট কিপিং’-এর নামে সেলফ-সেন্সরশিপ চর্চায় পরিবর্তন আসবে। একটি
দৃষ্টান্ত দিয়ে শেষ করি: র্যাব সম্পর্কে যেসব সংবাদ বাংলাদেশের মূলধারার
সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হলো, তা হয়তো হতো না, যদি প্রথমে উইকিলিকস মার্কিন
রাষ্ট্রদূত মরিয়ার্টির গোপন তারবার্তা প্রকাশ না করত এবং তার ভিত্তিতে ব্রিটেনের
গার্ডিয়ান পত্রিকা সংবাদ পরিবেশন না করত।
(এই লেখাটি লেখকের ব্লগ থেকে সংগৃহীত)
লেখকের
ব্লগ পড়তে লিংকে ক্লিক করুন:http://blog.priyo.com/2010/dec/26/607.html
No comments:
Post a Comment