হেসে কাঁদিয়ে গেলেন সুচিত্রা সেন
বাংলা ছায়াছবির কিংবদন্তি ও মহানায়িকা সুচিত্রা সেনের জীবনাবসান হয়েছে।
শুক্রবার স্থানীয় সময় সকাল আটটা ২৫ মিনিটে কলকাতার বেলভিউ হাসপাতালে
৮৩ বছর বয়সে চির বিদায় নিলেন সুচিত্রা সেন।
বাংলা ছায়াছবির এই
মহানায়িকা বহুদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন। শ্বাসকষ্টজনিত রোগে ২৬ দিন ধরে তিনি
কলকাতার বেলভিউ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। এরই এক পর্যায়ে শুক্রবার
সকাল আটটা ২৫ মিনিটে হৃদরোগে আক্রান্ত হন মহানায়িকা সুচিত্রা সেন। মৃত্যুর
সময় তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর।
মৃত্যুকালে তাঁর মেয়ে আরেক
প্রখ্যাত অভিনয় শিল্পী মুনমুন সেন ও দুই নাতনি রিয়া এবং রাইমাকে রেখে গেছেন। তাঁর
মৃত্যুর খবরে উভয় বাংলায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
সুচিত্রা সেন ১৯৩১ সালে
বাংলাদেশের পাবনা জেলার এক মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর আসল নাম
রমা দাশগুপ্ত। তাঁর বাবা করুণাময়
দাশগুপ্ত ছিলেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক। ১৯৪৭ সালে শিল্পপতি পরিবারের সন্তান
দিবানাথ সেনকে বিয়ে করার পর সুচিত্রা সেন (রমা) কলকাতায় আসেন।
১৯৫২ সালে `শেষ কথায়` ছায়াছবির নায়িকার ভূমিকায় প্রথম
আত্মপ্রকাশ করেন সুচিত্রা সেন। এ সময় তিনি পাবনার রমার নাম বদলে হন
সুচিত্রা সেন।
মহানায়িকা সুচিত্রা সেনের
বাঁকা চাহনি,
কটাক্ষ, হাসি, অভিনয় প্রতিভা দিয়ে মুগ্ধ রাখেন দর্শকদের। এক সময় তৈরি
হয় অবিস্মরণীয় উত্তম-সুচিত্রার জুটি। মহানায়ক উত্তম কুমারের সঙ্গে জুটি বেঁধে
সুচিত্রা সেন ও উত্তম কুমার বাংলা চলচ্চিত্রকে শিল্পের স্বর্ণযুগে উত্তরণ ঘটান।
সুচিত্রা সেনের জীবনের
প্রথম বক্স অফিস হিট করা ছবির নাম- ‘সাড়ে চুয়াত্তর।’ এ ছবির
মাধ্যমেই মহানায়ক উত্তম কুমারের সঙ্গে জুটি বাঁধেন মহানায়িকা সুচিত্রা।
সুচিত্রা সেন
উত্তম কুমার, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, অশোক কুমার, বসন্ত চ্যাটার্জিসহ বেশ কয়েকজন নায়কের সঙ্গে জুটি বেঁধে
অসাধারণ কিছু ছবি উপহার দিয়েছেন।
`শাপ মোচন`, `হারানো
সুর`, `পথে হল দেরি`, `ইন্দ্রাণী`, `সপ্তপদী`, `গৃহদাহ`, `হার মানা হার`, `হসপিটাল`, `সাত পাকে বাঁধা`, `সাগরিকা`, `দত্তা` প্রভৃতি সিনেমায় অসাধারণ প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন মহানায়িকা সুচিত্রা সেন।
১৯৫৫ সালে ‘দেবদাস’ ছায়াছবিতে দিলীপ কুমারের বিপরীতে পার্বতীর
ভূমিকায় প্রথম দেখা যায় সুচিত্রা সেনকে। এরপর বলিউডে হিন্দি
ছায়াছবি `মমতা` এবং `আঁধি`র জন্য ফিল্ম ফেয়ার পুরস্কারে ভূষিত হন তিনি।
১৯৬৩ `সপ্তপদী`-র জন্য মস্কো ফিল্ম ফেস্টিভালে সেরা অভিনেত্রীর
পুরস্কার এই মহানায়িকা। ১৯৭৮ সালে `প্রণয় পাশা` ছায়াছবিতে অভিনয় শেষেই অজানা কারণে স্বেচ্ছানির্বাসনে চলে যান বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি
সুচিত্রা সেন। এরপর আর কখনোই তাকে প্রকাশ্যে দেখা যায়নি। কোনো সংবাদমাধ্যমেরও
মুখোমুখি হননি তিনি। হাজার চেষ্টা করেও কেউ এ রহস্য উদঘাটন করতে পারেননি। ফলে সাধারণ দর্শক ও সুচিত্রাভক্তরা জানতে পারেননি, কেন তাদের সুচিত্রা কেন অন্তরালে চলে গেলেন।
সেই বাঁকা হাসি দিয়েই হাজার ভক্তকে কাঁদিয়ে যেন বুকে চাপা অভিমান নিয়েই শুক্রবার সকালে চিরবিদায় নিলেন বাংলা ছায়াছবির কিংবদন্তি ও মহানায়িকা সুচিত্রা সেন!
সেই বাঁকা হাসি দিয়েই হাজার ভক্তকে কাঁদিয়ে যেন বুকে চাপা অভিমান নিয়েই শুক্রবার সকালে চিরবিদায় নিলেন বাংলা ছায়াছবির কিংবদন্তি ও মহানায়িকা সুচিত্রা সেন!
No comments:
Post a Comment