Thursday, December 31, 2015

২০১৫: পেছনে ফেলে নারীশক্তি শুভবুদ্ধি বিজ্ঞান এগিয়ে




২০১৫: পেছনে ফেলে নারীশক্তি শুভবুদ্ধি বিজ্ঞান এগিয়ে

-আশিস বিশ্বাস, সংবাদকর্মী
facebook@ ashish.biswas.33; twitter @Ashishkbiswas; mail: ashishbiswas@rocketmail.com



২০১৫ সাল পৃথিবী ও বাংলাদেশ এবং সেই সঙ্গে ভারত উপমহাদেশের ছিল শনির দশা। বিশ্বব্যাপী ধর্মীয় জঙ্গি গোষ্ঠী আইএস (Islamic State of Iraq and Syria-ISIS, ISIL,IS) গোষ্ঠীর তাণ্ডব দেখিয়ে দিয়েছে, ধর্মের আদিম অবস্থা!! কত ভয়ঙ্কর ছিল হাজার বছর আগেকার ধর্মীয় ব্যবস্থাইতিহাস জানায়, ধর্মের বিস্তার ঘটেছে, ধর্মীয় প্রচারক ও রাজাদের মাধ্যমেরাজ্য বিজয় করে রাজাদের ধর্মগ্রহণে বাধ্য করা হয়েছে প্রজাদের।

এটা সব ধর্মের ক্ষেত্রেই ঘটেছে, শুধুমাত্র বৌদ্ধধর্ম ছাড়া। কিন্তু বিগত দশকে এ ধর্মের সহিংসরূপও পৃথিবীবাসী লক্ষ করেছে, মায়ানমারসহ বৌদ্ধ অধ্যূষিত দেশগুলোতে।

নতুন করে পুঁজিবাদী দেশের লোভলালসা চরিচার্থ করতে উত্থান ঘটানো হয়, ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলোকে। একটার পরিপ্রেক্ষিতে অারেকটা ধর্মীয় গোষ্ঠীর জন্ম হয়েছে! পৃথিবী কাঁপিয়েছে, আইএস আর ভারত কাঁপিয়ে বিজেপি (ভারতীয় জনতা পার্টি) এবং এর শরিকদল; ধর্মের আদিম সত্তাকে সামনে এনে।

পৃথিবীর সভ্যতার ধারা এসব অমানবিক ব্যবস্থাকে পরিহার করায় সব ধর্মই তাদের ধর্মীয় বিধানকে বিজ্ঞানের জয়যাত্রার সঙ্গে সঙ্গে পরিশুদ্ধ করে নিয়েছে। সব ধর্মই দাবি করেছে, তাদের ধর্ম বিজ্ঞানভিত্তিক। মজার ব্যাপার, বিজ্ঞানকে ধর্মের কাছে যেতে হয়নি তার সত্যতা প্রমাণের জন্য। ধর্মকেই বার বার বিজ্ঞানের কাছে যাতে হয়েছে। সনদ নিতে হয়েছে, ধর্মটি বিজ্ঞানভিত্তিক। কারণ, প্রচলিত ধর্মের অস্তিত্বত আজ প্রশ্নের মুখোমুখি।

বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রায় বিজ্ঞানই বিজ্ঞানের আগের মতবাদকে পেছনে ফেলে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। বিজ্ঞানের ধারণা বদ্ধমূল নয়, আপেক্ষিক। কারণ, আরো উন্নত প্রযুক্তি আগের প্রযুক্তিকে পেছনে ফেলে সভ্যতাকে এগিয়ে নিয়ে গেছে।

আর এদিকে, পুঁজির লোভে ধর্মের পুরনো ব্যবস্থাকে ফের জীবিত করেছে, রাষ্ট্রীয় শক্তিগুলো। রাষ্ট্রে যে ধর্মের শাসকেরা অবস্থান করেছেন, তাদের মতো করেই এবং তাদের স্বার্থেই বিভিন্ন জঙ্গি গোষ্ঠীকে উসকে দিয়েছেন। ফলে, পৃথিবী এত অস্থির



ধর্ম রক্ষার নামে আইএস মানুষকে নৃশংসভাবে জবাই, পুড়িয়ে মেরেছে; যা ধর্মের অসারতাকেই তুলে ধরেছে। তবে তাদের প্রতি নীরব সমর্থন আরো ভয়ঙ্কর বার্তা দিয়েছে, পৃথিবীকে। কিন্তু বড় সত্যি হচ্ছে, ধর্মের জন্য মানুষ নয়, মানুষের জন্য ধর্ম! মানুষ না থাকলে ধর্মের অস্তিত্বই তো থাকে না। কিন্তু এই ধারণাকে অস্বীকার করে গায়ের জোরে তাদের মতবাদকে প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে। কিন্তু মানুষ এগুলোকে শত শত বছর ধরে পরিহার করে এসে নিজেদের আরো যুক্তিবাদী ও মানবিক করেছেন। মানুষ আরো সভ্য হয়ে মানুষে পরিণত করছেন।

এদিকে, ভারতের বিজেপি সরকার ধর্মের পুরনো এবং পরিত্যক্ত ফেলে আসা ধারণা ‘গোমাতা’কে দেবতা বানিয়ে সস্তা জনপ্রিয়তা অর্জনের জন্য মানুষকে পিটিয়ে মেরেছে। আর রাষ্ট্র তার নাগরিককে যে নৃশংসভাবে হত্যা করা হচ্ছে, সে ব্যাপারে নিশ্চুপ থেকেছে। কিন্তু এর বিরুদ্ধে জেগে উঠেছেন, শিল্পী-সাহিত্যিক, কবি-লেখক এবং সুস্থ ও মুক্তমনা মানুষ।


বিশ্বব্যাপী ধর্মীয় জঙ্গি তাণ্ডব মানুষের প্রচলিত ধর্মকে যেমন অসার প্রমাণ করেছে, তাতে নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে নারীরাও। অথচ সব ধর্মই পুরুষতান্ত্রিক হওয়াতে এর মূল শিকার হয়েছেন, নারীরাই। আবার মধ্যপ্রাচ্য থেকে শুরু করে ইউরোপ, আমেরিকা, এশিয়া এবং ইসরাইলের নারীরাও সোচ্চার হয়েছেন, এরই বিরুদ্ধে।

ফলে, বিশ্বে নারী নতুন একটা ‘শক্তি’ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। তারাও প্রমাণ করেছেন, পুরুষের পাশাপাশি কোনো কোনো ক্ষেত্রে পুরুষ থেকেও তারা এগিয়ে।

আশা করা যায়, ২০১৬ সালে ‘নারীশক্তি’ আরো শক্তি অর্জন পৃথিবীকে বাসযোগ্য করে তোলার জন্য আরো বেশি ভূমিকা রাখবে। পুরুষ যেমন ‘ধ্বংস’র প্রতীক তেমননি নারী ‘সৃষ্টি’র প্রতীক হিসেবে নিজেদের অবস্থান শক্ত করেছে।

ধর্মীয় জঙ্গি তাণ্ডব বিশ্বব্যাপী ‘অভিবাসী’ ‘শরণার্থী’ তৈরি করেছে। সবচেয়ে বড় সত্যি হলো, ধর্ম যে মানুষের বন্ধু নয়, তা হাড়ে হাড়ে প্রমাণ করে দিয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশগুলো। অথচ ইউরোপীয় দেশগুলো ‘আইলান কুর্দি’র মৃতদেহ দেখেই তাদের মনোভাব পরিবর্তন করে ১০ লাখ শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে। শরণার্থীদের মধ্যে অর্ধেকই আগত সিরিয়া থেকে। সিরিয়া এখন ধর্ম এবং বিশ্বশক্তির গিনিপিগ।

পৃথিবীর সব সমস্যাই সমাধানযোগ্য। দরকার শুধু শুভবুদ্ধি উদয়ের। সে ক্ষেত্রেও পৃথিবী এগিয়ে যাচ্ছে শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষদের জন্যই।

এছাড়া মানুষের জয়যাত্রা বিজ্ঞানের ধারায় অব্যাহত রয়েছে। আমাদের সৌরমণ্ডল ছাড়িয়ে অন্য গ্যালাক্সি এবং বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টি রহস্য উদঘাটনে বিজ্ঞান আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে অগ্রগামী। সার্ন এবং মঙ্গলে পানির অস্তিত্ব মানুষের আশাকে আরো আশাবাদী করেছে।

মানুষের চোখ এখন বহির্বিশ্বের মিলিয়ন আলোকবর্ষের দূরে ইন্টারস্টেলার (Interstellar) পর্যন্ত চলে গেছে। এ যাত্রা এখনো অব্যাহত।

০১৬ সাল নারীশক্তি ও বিজ্ঞান আমাদের নতুন বাসযোগ্য পৃথিবী তৈরিতে আরো যে ইতিবাচক মাত্রা যোগ করবে, তা বিদায়ী ২০১৫ সালেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

জয়তু নারীশক্তি ও বিজ্ঞানের। তবে পেছনে পড়ে গেল প্রচলিত ধর্ম। মানুষের ধর্ম যে মানবতা, সেটাই আবারও প্রতিষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, সেটাই বড় সান্ত্বনার বাণী!


                                                       ....................................................