যৌন
সাংবাদিকতা »
তারিখ: Nov
২৭, ২০১৩। সময়: ০৯:৪৪ অপরাহ্ণ
আহমেদ আরিফ
ক..
ক্লাস নাইনে তখন। বাজারে বন্ধুর সাথে দাঁড়িয়ে কথা বলছিলাম। আমাদের থেকে একটু দূরেই রিকশায় দাঁড়িয়ে
মধ্য বয়সী একজন ৪ পৃষ্ঠার একটি ট্যাবলয়েড উঁচু করে ধরে চিৎকার করে বলতে শুরু করল,’মুনমুনের গর্ভে এরশাদের
সন্তান, মুনমুনের
গর্ভে এরশাদের সন্তান! দাম মাত্র দুই টাকা, মাত্র দুই টাকা।’ পত্রিকার নাম ‘ভালবাসা’। আশপাশে মানুষের ভিড় লেগে গেল। সবারই ধারণা ছিল, বিশ্ববেহায়া এরশাদের নতুন
কেলেঙ্কারির খবর বুঝি!
আসলে তা না। খবরটি ছিল কোনো এক গ্রামের এরশাদ এবং
মুনমুনের প্রেম কাহিনী। যারা
কিনে হতাশ হয়েছিলেন, তাদের কয়েকজনের হুমকিতে আর কোনো দিনই ‘ভালবাসা’ পত্রিকার বিক্রেতাকে
আমাদের বাজারে দেখা যায়নি।
খ..
‘অভিনেত্রী মোনালিসার বিছানায় মোশাররফ করিম’ কিংবা ‘নায়িকা মাহি ১০ লাখ টাকায়
রাজি’ টাইপের
শিরোনামে ‘বুকের
সামান্য অংশ দেখা যাওয়া ছবি’-সহ খবর
অনলাইন নিউজ সাইটগুলোতে প্রতিদিনই দেখা যায় এবং সর্বাধিক পঠিত তালিকায় নিউজগুলো
জায়গা করে নেয়। অথচ ক্লিক করে ভেতরে ঢুকলে পাঠক দেখেন, নায়িকা মাহি নতুন ছবিতে ১০
লাখ টাকায় চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন কিংবা নাটকে অসুস্থ মোনালিসার পাশে বিছানায় বসে
মোশাররফ করিম কীভাবে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়েছেন, সে খবর!
গ..
খবরে খেলার ছবি থাকে না। থাকে ৮০ ভাগ শরীর দেখা যাওয়া চিয়ার্স
গার্লের ছবি। হোমপেজে অ্যাডাল্ট পিকচার দিয়ে কীভাবে
সেক্স করবেন; সেক্সের
সময় কী করবেন, কী
করবেন না; সানি
লিওনের ব্রা-পেন্টি পরা ছবি দিয়ে ‘সানি
লিওন এখন উলঙ্গ হতে লজ্জা পান’-এমন
নিউজ পাবলিশ হচ্ছে! সবার একটাই লক্ষ্য অ্যালেক্সা র্যাকিংয়ে ওপরে আসা। যত তাড়াতাড়ি অ্যালেক্সা র্যাংকিংয়ে ওপরে
আসা যাবে, তত তাড়াতাড়ি বিজ্ঞাপন পাওয়া যাবে! ৩০-৫০ হাজার টাকা পুঁজি খাটিয়ে বছরেই
৫ লাখ টাকা ইনকামের ধান্দায় ব্যাঙের ছাতার মতো আবিভার্ব হচ্ছে নতুন নতুন নিউজ সাইট।
ঘ..
স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন এসে যায় এ
সাংবাদিকতার নাম কী? হলুদ
সাংবাদিকতা নাকি যৌন সাংবাদিকতা?
ব্যক্তিগতভাবে
আমি মনে করি, এমন সাংবাদিকতা মোটেই হলুদ সাংবাদিকতা নয়। এমন সাংবাদিকতা পর্নো তথা যৌনতানির্ভর
সাংবাদিকতা। সংক্ষেপে বলা যায়, যৌন সাংবাদিকতা।
ঙ..
মানুষরূপী বিকৃত মানসিকতার অসভ্যদের যৌন
সাংবাদিকতা রুখবে কে? রাষ্ট্র, সুশীল সমাজ নাকি পাঠক? রাষ্ট্র যেখানে
সন্ত্রাসীদের প্রমোট করে,
সুশীল
সমাজ যেখানে রাজনীতিবিদদের নগ্ন চামচামি করে সেখানে তাদের কাছে কিছু আশা করাটাই
বোকামি। বাকি থাকে, পাঠক। হ্যাঁ, পাঠকরাই পারে বিকৃত মানসিকতার যৌন সাংবাদিকতা রুখে দিতে। সে জন্য যা করতে হবে, তা হচ্ছে- যৌন সুড়সুড়ি, যৌন ইঙ্গিত দেয়া শিরোনাম
এবং ছবি দেয়া নিউজগুলো এড়িয়ে যাওয়া।
বিকৃত মানসিকতার যৌন সাংবাদিকদের কৌশলে
পরাজিত হয়ে তাদের টাকা কামানোর ঘুটি হবেন নাকি তাদের রুখে দেবেন, তা এবার আপনি
নিজেই ঠিক করুন।
[সৌজন্যে: নিউজইভেন্ট।]
No comments:
Post a Comment