আল-কায়েদার ইন্ধনে ব্লগার রাজীব হত্যা!
আশিস বিশ্বাস, অ্যাসিস্ট্যান্ট
আউটপুট এডিটর
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
ঢাকা: স্থপতি, ব্লগার
ও গণজাগরণ মঞ্চ কর্মী আহমেদ রাজীব হায়দার শোভন হত্যার প্রথম বার্ষিকী পার হলো। তার হত্যার
পেছনে জামায়াত-শিবির-হেফাজতসহ পাকিস্তানভিত্তিক নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদার
ইন্ধন ছিল বলে তথ্য পাওয়া গেছে।
এ সংগঠনগুলির
আদর্শিক মিল থাকায় শাহবাগ আন্দোলন গণজাগরণ মঞ্চের বিপক্ষে অবস্থান নিতে দেখা গেছে, যা
রাজীব হায়দার শোভন হত্যার সঙ্গে সম্পৃক্ত।
২০১৩ সালের ৫
ফেব্রুয়ারি রাজধানীর শাহবাগে তরুণদের স্বতঃর্ফূত উদ্যোগে গড়ে উঠেছিল ‘গণজাগরণ
মঞ্চ।’
১৯৭১ সালে
মহান মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ
ট্রাইব্যুনাল জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে
যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় ঘোষণা করলে তরুণেরা প্রতিবাদে ফেটে পড়েন।
ক্রমান্বয়ে
লাখো মানুষের দিনরাত উপস্থিতিতে শাহবাগ উত্তাল হতে থাকে। দিন দিন তা আরো বাড়তে থাকে।
প্রতিবাদী
শাহবাগ ঘোষণা দেয়,
কাদের মোল্লার ফাঁসি না হওয়া পর্যন্ত তারা ঘরে ফিরবে না। তারা শাহবাগসহ
রাজপথেই অবস্থান করবে।
এই গর্জে ওঠা
এক তরুণ ছিলেন আহমেদ রাজীব হায়দার শোভন (৩৫)। স্থপতি রাজীব একজন ব্লগার হিসেবে পরিচিত
ছিলেন।
শাহবাগে
প্রতিবাদের কারণে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী একটি চক্র প্রতিবাদী তরুণদের হত্যার
পরিকল্পনা করে। এর
মধ্যে ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দার শোভন ও আসিফ মহিউদ্দিন ছিলেন অন্যতম।
শাহবাগের
আন্দোলন যখন প্রচণ্ড মাত্রায় গতি পায়, ঠিক তার ১০
দিনের মাথায় ১৫ ফেব্রুয়ারি রাতে মিরপুরের বাসায় ফেরার পথে উগ্র জঙ্গিপন্থি সংগঠনের
সদস্য ও নর্থ সাউথ ইউনির্ভাসিটির পাঁচ ছাত্র রাজীব হায়দারকে কুপিয়ে হত্যা করেন।
রাজীব হায়দার
শোভন ‘থাবা
বাবা’ নামে
ব্লগে ইসলাম ও নবীজীর (র.) বিরুদ্ধে লেখালেখি করেন এই অভিযোগ এনে তাকে হত্যা করা
হয়।
এদিকে, রাজীব
হত্যার পর মার্চ মাসে পাকিস্তানভিত্তিক তালেবান সংগঠন ‘তানজীম
আল কায়েদা’
প্রধান উস্তাদ আহমেদ ফারুক (দা.বা.) এক বিবৃতিতে বাংলাদেশের
মুসলমানদের প্রতি জিহাদের ডাক দেন।
'তানজীম আল
কায়েদা’-র
পক্ষে দাওয়াহ ও মিডিয়া বিভাগ https://www.ansar1.info/showthread.php?t=45353https://www.ansar1.info/showthread.php?t=45353 সাইটের মাধ্যমে বিবৃতিটি প্রচার করে।
বিবৃতিটি
বাংলায় লিখিত ছাড়াও ঊর্দু, ইংরেজির অডিও ভার্সন প্রচার করা হয়।
বিবৃতিতে
বাংলাদেশের মুসলমানদের জিহাদে ঝাপিয়ে পড়তে এবং মুক্তমনা ব্লগারসহ মুক্তচিন্তার
মানুষদের ধর্মের নামে হত্যার আহ্বান জানানো হয়।
বিবৃতিতে
উস্তাদ আহমেদ ফারুক (দা.বা.) বলেন, ‘বাংলাদেশের
মুসলমানরা যখন ইতিহাসের একটি ক্রান্তিকাল
অতিক্রম করছেন, সে সময়
আপনাদের প্রতি বার্তা পাঠাতে পেরে আমি সম্মানিত বোধ করছি। হাজী শরীয়াতুল্লাহ (র.), তিতুমীর
(র.) এর দেশে এখন কুফর বনাম ঈমানের, ধর্মনিরপেক্ষতা বনাম ইসলামের মধ্যে এক সিদ্ধান্তকর সংগ্রাম
চলছে। বিদেশীদের
ক্রিয়ানক,
এই ধর্মনিরপেক্ষ ও ইসলাম বিরোধী সরকার যে সকল পদক্ষেপ নিচ্ছে
তা কোন বিশেষ ব্যক্তি কিংবা দলকে নিষিদ্ধ করার জন্য নয় বরং সুস্পষ্টভাবে তা
আল্লাহর দ্বীনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ। ইসলামের সোনালী ইতিহাস সমৃদ্ধ এই দেশ থেকে ইসলামের শেষ
চিহ্নটুকুও মুছে দেয়ার একটি জঘন্য পরিকল্পনা চলছিলো যার চূড়ান্ত পর্যায় এখন শুরু
হয়েছে।’
বিবৃতিতে তিনি
বলেন, ‘বাংলাদেশের
বসবাসকারী আমার প্রিয় ভাইরা! আল্লাহর কসম, এটা কোন
রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব নয়। এটা
কুফর ও ইসলামের লড়াই। আহমেদ
রাজীব হায়দারের মতো আরো অনেক লানতপ্রাপ্তরা এখনো জীবিত চলাচল করছে। তারা কথা ও
লেখনীর মাধ্যমে এখনো আল্লাহর রাসুল (স.) ও ইসলামী শরীয়তের বিরুদ্ধে বিষোদগার কর
চলেছে। পশুর
চেয়ে অধম এ সকল হতভাগ্য সৃষ্টির বেঁচে থাকার কোন অধিকার নেই। এই শ্রেণীর প্রত্যেককে খুঁজে খুঁজে
আক্রমণের লক্ষ্যবস্তুতে বানানো এবং এই লানতপ্রাপ্ত ব্লগারের মতো বাকীদেরও
অলি-গলিতে কতল করা শরীয়াত আমাদের উপর ওয়াজিব করেছে।’
গত বছর ১৫
ফেব্রুয়ারি আহমেদ রাজীব হায়দার শোভন হত্যার পর মার্চ মাসে আল-সাহাব এটি অনলাইনে
প্রচার করে।
রাজীব হায়দার
শোভন হত্যা মামলায় নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাত শিক্ষার্থী ও উগ্রপন্থি সংগঠন 'আনসারুল্লাহ
বাংলা টিমের'
প্রধান শায়খ জসীমুদ্দীন রাহমানীর বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দেয়
পুলিশ।
চার্জশিটভুক্ত
আসামিরা হলেন- উগ্র ধর্মীয় সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের কিলিং মিশনের ছয় সদস্য
ফয়সাল বিন নাঈম ওরফে দ্বীপ, মাকসুদুল হাসান অনিক, এহসান
রেজা রুম্মন,
নাঈম সিকদার ইরাদ, নাফিজ ইমতিয়াজ
ও সাদমান ইয়াছির মাহমুদ।
তারা সবাই
বেসরকারি নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির ছাত্র। গ্রেফতারের পর অবশ্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে
তাদের বহিষ্কার করা হয়।
রাজীব
হায়দারের হত্যার নির্দেশদাতা ও পরিকল্পনাকারী হিসেবে কাজ করেছেন রেদোয়ানুল আজাদ
ওরফে রানা ও উগ্র সংগঠনটির প্রধান শায়খ জসীমুদ্দীন রাহমানী। মামলায় বাংলা টিমের জসীমুদ্দীন
রাহমানীসহ ছয়জনই হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তি দেন।
এদিকে, দেখা
যায়, গত
বছরের ফেব্রুয়ারিতে গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলন গড়ে ওঠার পাশাপাশি চট্টগ্রামের
হাটহাজারীর আহমদ শাহ সুফীর নেতৃত্বে হেফাজতে ইসলাম এই আন্দোলনের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য
তৎপরতা শুরু করে।
তারা শাহবাগে জমায়েত
তরুণদের ‘নাস্তিক
ব্লগার’
আখ্যা দিয়ে ফাঁসির দাবি জানায়। এ জন্য তারা ঢাকায় ৫ এপ্রিল মহাসমাবেশের
ঘোষণা দেয়। তারা হেফাজতে
ইসলামকে অরাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে দাবি করলেও তাদের তৎপরতা ছিল রাজনৈতিক। এ ছাড়া
জামায়াত নিষিদ্ধে ও মানবতাবিরোধীদের ফাঁসির দাবিকে সমর্থনের বিষয়টি এড়িয়ে যান।
তাদের তৎপরতা
ও কার্যসূচি দেখে সাধারণ মানুষের মধ্যে ধারণা জন্মে, এরা মূলত
জামায়াত লালিত সংগঠন এবং যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে গণজাগরণ মঞ্চের বিরুদ্ধে আন্দোলনে
নেমেছে।
এই ধরনের
তৎপরতার সঙ্গে জামায়াত-শিবিরের জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠে। শুধু তাই নয়, পাকিস্তানভিত্তিক আল-কায়েদা সংগঠনের সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততারও প্রমাণ মিলতে থাকে।
সর্বশেষ, গত
বছরের ১২ ডিসেম্বর জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার ফাঁসি
কার্যকর করার পর পাকিস্তানভিত্তিক নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান
(টিটিপি) সে দেশের বাংলাদেশ হাইকমিশন উড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়।
এ খবর প্রমাণ
করে যে,
তালেবানের সঙ্গে জামায়াত-শিবিরের সম্পৃক্ততা রয়েছে। তাদের ইন্ধনেই
হেফাজতে ইসলাম, আনসারুল্লাহ
বাংলা টিমসহ আরো কিছু সংগঠনের মদদে গোপন পরিকল্পনায় ব্লগার ও মুক্তমনা আহমেদ রাজীব
হায়দার শোভন,
আসিফ মহিউদ্দীনকে হত্যার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
এর মধ্যে
রাজীব হায়দার শোভনকে হত্যা করতে সক্ষম হলেও আসিফ মহিউদ্দীনসহ অনেকেরই হত্যার
পরিকল্পনা তাৎক্ষণিকভাবে ভেস্তে যায়।
আল-কায়েদার
বিবৃতিতেও ধর্মনিরপেক্ষ, মুক্তমনা ব্লগার ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায়
বিশ্বাসীদের বেঁচে থাকার অধিকার নেই বলে জানানো এবং তাদের হত্যায় জিহাদের ডাক
দেওয়া হয়।
শনিবার (১৫
ফেব্রুয়ারি) স্থপতি ও ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দার শোভনের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী
অতিবাহিত হলো। কিন্তু, তার
হত্যাকারীদের বিচার এখনো শেষ হয়নি। এ ছাড়া জঙ্গি সংগঠনের হুমকি আজও বন্ধ হয়নি। শুধু তাই-ই নয়, তাদের
গোপন তৎপরতা ও প্রচার-প্রচারণা থেমে নেই। অনলাইনে এর যথেষ্ট প্রমাণ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে
রয়েছে।
এই সাইটগুলোতে
আল-কায়েদার বিবৃতি পড়ে ও শুনে যে কেউ ধারণা করতে পারবেন, জামায়াত-আল-কায়েদা-হেফাজত
একই সূত্রে গাঁথা।
ঊর্দু
অডিও- https://archive.org/download/frq-7j-shr3t/Urdu.MP3
বাংলা অনুবাদ: http://www.sendspace.com/file/yj05pk
ঊর্দু অনুবাদ: https://archive.org/download/frq-7j-shr3t/Urdu.pdf
ইংরেজি অনুবাদ: https://archive.org/download/frq-7j-shr3t/English.pdf
বাংলা অনুবাদ: http://www.sendspace.com/file/yj05pk
ঊর্দু অনুবাদ: https://archive.org/download/frq-7j-shr3t/Urdu.pdf
ইংরেজি অনুবাদ: https://archive.org/download/frq-7j-shr3t/English.pdf
পিডিএফ ও অডিও বার্তা:
https://ia601702.us.archive.org/28/items/frq-7j-shr3t/Urdu.MP3
(Urdu)http://islamicjibonbd.blogspot.com/2013/04/blog-post_4548.html
মূল সূত্র- https://www.ansar1.info/showthread.php?t=45353
ঊদু অডিও- https://archive.org/download/frq-7j-shr3t/Urdu.MP3
বাংলা অনুবাদ: : http://www.sendspace.com/file/yj05pk
ঊর্দু অনুবাদ: https://archive.org/download/frq-7j-shr3t/Urdu.pdf
ইংরেজি অনুবাদ:: https://archive.org/download/frq-7j-shr3t/English.pdf
পিডিএফ ও অডিও বার্তা:
https://ia601702.us.archive.org/28/items/frq-7j-shr3t/Urdu.MP3 (Urdu)
http://islamicjibonbd.blogspot.com/2013/04/blog-post_4548.html
- See more at: http://www.banglanews24.com/new/%E0%A6%9C%E0%A6%BE%E0%A6%A4%E0%A7%80%E0%A7%9F/268244-%E0%A6%86%E0%A6%B2-%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A7%9F%E0%A7%87%E0%A6%A6%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%87%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A7%E0%A6%A8%E0%A7%87-%E0%A6%AC%E0%A7%8D%E0%A6%B2%E0%A6%97%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%9C%E0%A7%80%E0%A6%AC-%E0%A6%B9%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE.html#sthash.fGTdWD9s.dpuf
বাংলাদেশ সময়: ১৮২১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০১৪
সূত্র: বাংলানিউজ